শারীরিক সম্পর্কের পরই গলা টিপে প্রেমিকাকে হত‌্যা: পিবিআই

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রেমের সম্পর্কটা পরিবার থেকে মেনে নিচ্ছিল না, অন‌্যদিকে প্রেমিকা সন্তানধারণ করায় সেও বিয়ের জন‌্য চাপ দিচ্ছিলো —তাই দায় এড়াতে ঠাণ্ডা মাথায় প্রেমিকাকে হত‌্যার সিদ্ধান্ত নেন প্রেমিক ইউনুস আলি (২৫)। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রেমিকা ফাতেমাকে হত‌্যাও করেন তিনি। এরপর গুম করেন ফাতেমার লাশ।

এর আগে পরিকল্পনা অনুযায়ী ফাতেমাকে নিয়ে সারাদিন ঘোরাঘুরি করেন ইউনুস। রাতে দু’বার শারীরিক মিলনেও জড়ান তিনি। তারপর আচমকা তার গলা টিপে হত‌্যা করেন ফাতেমাকে। এরপর লাশ লুকিয়ে ফেলেন তিনি।

পুলিশ শুরুতে এই হত্যা মামলার কোনো কূল কিনারা উদ্ধার করতে ব‌্যর্থ হয়। পরে হত‌্যা রহস্য উদ্ধার ও খুনিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

শনিবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে পিবিআইয়ের নারায়ণগঞ্জ অফিসের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম এসব তথ্য জানান।

এর আগে ফাতেমা হত্যার প্রধান আসামি ইউনুস আলীকে (২৫) সিলেটের জৈন্তাপুর বাংলাদেশ ভারতের সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার ইউনুস হত্যার বর্ণনা দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই জানায়, ফাতেমা বেগম ও ইউনুস আলী আড়াইহাজারের গোপালদী মানিকনগর এলাকায় পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করতেন।  মালয়েশিয়া ফেরত ইউনুস আলীর সঙ্গে তালাকপ্রাপ্তা ফাতেমা বেগম প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই সম্পর্ক খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কে গড়ায়।  এরইমধ্যে ইউনুস আলী নতুন বাড়ি করে এক কিলোমিটার দূরে চলে যায়। পুরাতন বাড়ি ফাঁকা থাকায় সেখানে তাদের সাক্ষাৎ হতো।  পাঁচ মাস পর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন ফাতেমা বেগম। এরপর তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে।

এদিকে, ইউনুসের পরিবার বিষয়টি জেনে যায় এবং ডিভোর্সি ফাতেমাকে পুত্রবধূ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা ইউনুসকে অন্যত্র বিয়ে করানোর জন্য মেয়ে দেখছিল। পরিবার নিতে না চাইলেও ফাতেমা ইউনুসকে বিয়ের ব্যাপারে চাপ দিতেই থাকে। তখন ফাতেমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে ইউনুস। গত ১০ আগস্ট  ইউনুস আলী তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ফাতেমা বেগমকে মোবাইল ফোনে বাসা থেকে ডেকে আনে। তাকে নিয়ে সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে সন্ধ্যায় তার নতুন বাড়ির পেছনে জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে ফাতেমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। পরে ফাতেমাকে সেখানে রেখে ইউনুস বাসায় চলে যায়। রাত ১০টার দিকে ইউনুসের পরিবারের সদস্যরা রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে সে আবার ওই জঙ্গলে আসে ফাতেমার সঙ্গে দেখা করার জন্য। ওই সময় সে আবার তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। এ অবস্থাতেই ফাতেমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর ফাতেমার লাশ এক  নির্মাণাধীন ঘরের বালু ভর্তি ভিতের (ভিটি) নিচে কোদাল দিয়ে গর্ত করে বালু চাপা দিয়ে চলে যায়। ঘটনার পর নিখোঁজ ফাতেমার সন্ধানে চারদিকে ছুটে বেড়ায় তার পরিবার।

এরপর মাটি চাপা দেওয়ার ছয়দিন পর লাশ পচে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হলে বাড়ির লোকজন ঘরের বালু সরিয়ে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় গোপাদলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মুক্তার হোসেন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত ২৯ অক্টোবর মামলাটি পিবিআইতে আসে।  মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে আসার মাত্র ৪৩ দিনের মাথায় রহস্য উন্মোচন ও আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যববহার করে পিবিআই আসামি ইউনুস আলীকে শনাক্ত করে। এরপর সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেপ্তার করে।

তিনি আরও জানান, আসামি এ হত্যার বর্ণনা দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। হত্যার আলামত নষ্ট করার জন্য আসামি নিহত ফাতেমা বেগমের মোবাইল সেট, জাতীয় পরিচয়পত্র, গলার হার, কানের দুল, হাত ব্যাগ, ওড়না গোপালদী বাজারের গাজীপুরা ব্রিজ থেকে হাড়দোয়া নদীতে ফেলে দেন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছেন কিনা তা নিয়ে তদন্ত চলছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর